ঢাকা, সোমবার   ০৬ মে ২০২৪

আগুন লাগা ফাগুনে ঘুরে আসুন শিমুল বাগানে (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৯:০৫, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৯:০৬, ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২২

শীতের জীর্ণতা কাটিয়ে আড়মোড়া ভাঙছে প্রকৃতি, গাছে গাছে ধুলোমাখা পাতা ঝরে নতুন পাতার আগমণ। ফুলেরাও ফুটছে সাড়ম্বরে। শীতকে বিদায় জানিয়ে এ যেন শুধুই ঋতুরাজকে বরণের প্রস্তুতি।  

বিশ্বকবি রবি ঠাকুর থেকে শুরু করে আধুনিককালের বাউল কবির মনকেও বারবার দুলিয়েছে বসন্তের ছোঁয়া। প্রাণের সতেজতা ফিরে ফিরে আসে ফাগুন হাওয়ায়।

বসন্তের আগমন শুধু মানব হৃদয়কেই উচাটন করে, বিষয়টা এমন নয়। ফাগুন আগমণে মাতাল হয় পাখিকূলও। যে কারণে এ সময় ক্ষণে ক্ষণে কোকিলও ডেকে ওঠে কুহু কুহু। 

আগুন লাগা ফাগুনের প্রকৃত আবেশ পেতে হলে কিন্তু যেতে হবে শহর থেকে একটু দূরে। যেখানে শিমুল-পলাশসহ বিভিন্ন ফুলের সমারোহ। 

সম্প্রতি বসন্ত উদযাপনে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সুনামগঞ্জ জেলার তাহিরপুর উপজেলার বড়দল ইউনিয়নে যাদুকাটা নদী তীরের মানিগাঁও গ্রাম।ওপারে ভারতের মেঘালয়, মাঝে যাদুকাটা নদী, এপারে রক্তিম শিমুল ফুলের সমারোহ।

প্রায় ১০০ বিঘার বেশি জায়গা জুড়ে গড়ে উঠেছে এই শিমুল বাগান। পাখির চোখে দেখলে বাগান যেন এক বিরাট লাল চাদর। 

থোকায় থোকায় শিমুল ফুলে ভরা সারি সারি গাছ, যার নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক ভিড় করছেন যাদুকাটা নদীর তীরে। 

বেড়াতেই শুধু নয়, নাটক সিনেমার শুটিং করতেও অনেকেই আসছেন এই শিমুল বাগানে। বাগানে পর্যটকদের জন্য ঘোড়াও রয়েছে, চাইলে আপনি ঘোড়ায় চড়ে ঘুরতে পারবেন পুরো বাগান। 

তবে যেভাবেই ঘুরে দেখুন না কেন, এই বাগানে ঢুকতে জনপ্রতি টিকেটের জন্য গুণতে হবে ৩০ টাকা। 

শোনা যায়, তাহিরপুর উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এবং ধনাঢ্য ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীন ২০০২ সালে এই বাগান গড়ে তোলেন। 

জয়নাল আবেদীন যাদুকাটা নদীর পশ্চিম তীরে অনাবাদী ধু ধু বালিয়াড়িতে শখের বসে প্রায় তিন হাজার শিমুল গাছের চারা রোপন করেন, যা মাত্র ১৫ বছরের ব্যবধানে পেয়েছে তার পূর্ণ যৌবন। 

শিমুল বাগানে ঘুরতে যাওয়ার সময় প্রধানত দুইটি। লাল লাল শিমুল ফুল দেখতে হলে আপনাকে অবশ্যই ফাল্গুন মাসে যেতে হবে। এই মাসের মাত্র ১৫ থেকে ২০ দিন প্রতিটি গাছ পূর্ণরুপে ফুলে ফুলে সজ্জিত থাকে। এর পর ঝরতে থাকে। তাই এই বাগানের সৌন্দর্য উপভোগের সবচেয়ে ভালো সময় ফেব্রুয়ারির ১০ তারিখ থেকে ২৫ তারিখ। 

আর বর্ষায় গেলে দেখতে পাবেন বাগানের আরেক রূপ। এ সময় গাছে ফুল না থাকলেও, ঘন সবুজ পাতায় পরিপূর্ণ শিমুল বাগানও দেখতে মন্দ নয়। বর্ষাকালের আরেকটি সুবিধা হল, এ সময় চাইলেই ঘণ্টাখানেক দূরত্বের টাঙ্গুয়ার হাওরটিও ঘুরে আসতে পারেন। 

যেভাবে যাবেন

শিমুল বাগান যেতে হলে প্রথমেই পৌঁছাতে হবে সুনামগঞ্জ জেলা শহরে। ঢাকার সায়দাবাদ থেকে হানিফ, শ্যামলী, এনা, মামুন ইত্যাদি বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির এসি/নন এসি বাস সুনামগঞ্জ যায়। ভাড়া ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকা। যেতে সময় লাগবে প্রায় ছয় ঘণ্টা।

সুনামগঞ্জ নেমে সুরমা ব্রিজের উপর থেকে বারেক টিলা হওয়ার সিএনজি এবং মোটর সাইকেল ভাড়ায় পাবেন। এক মোটর সাইকেলে দুইজন বসা যায়। মোটর সাইকেল ভাড়া নেবে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। যেতে সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার মতো। দরদাম করে আরও কমে পেতে পারেন। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা।

সিএনজি বা মোটর সাইকেল আপনাকে যাদুকাটা নদীর সামনে নামিয়ে দেবে। পাঁচ টাকা দিয়ে নদী পার হয়ে ওই পাড়ে গেলেই বারেক টিলা। বারেক টিলায় গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই শিমুল বাগান দেখিয়ে দেবে। বারেক টিলা থেকে যাদুকাটা নদীর ভিউ অসাধারণ। 

বিকাল পর্যন্ত বাগানে থেকে ছবি তুলে, যাদুকাটা নদীর পারে সময় কাটিয়ে আবার বারেক টিলার সামনে থেকে সিএনজি বা মোটর সাইকেল নিয়ে সুনামগঞ্জ ফেরত চলে আসতে পারেন।

হাতে সময় থাকলে আরেকটা মোটর সাইকেল নিয়ে চলে যেতে পারেন তাহিরপুর উপজেলা সদর। যাবার পথে টেকেরঘাট, নীলাদ্রি লেক ঘুরে যেতে পারেন। রাতে এখানে থেকে সকালে মোটর সাইকেল বা ট্রলারে টাঙ্গুয়ার হাওর ঘুরে আসতে পারেন। বর্ষাকাল ছাড়া হাওরে পানি কম থাকলেও প্রচুর পাখি দেখতে পাবেন। 

কোথায় থাকবেন?

শিমুল বাগানের আশপাশে থাকার জন্য ভালোমানের হোটেল নেই। বড়ছড়া বাজারে কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও তাহিরপুর বাজারে দুইটি হোটেল রয়েছে। শুকনো মৌসুমে গেলে রাতে সুনামগঞ্জ শহরে থাকাই ভালো। 

কোথায় খাবেন?

বারেক টিলাতে খাবারের হোটেল আছে। সেখানে খেতে পারেন। এছাড়া টেকেরঘাট বাজার, বড়ছড়া বাজার, তাহিরপুর বাজারে মোটামুটি মানের খাবারের দোকান আছে। তবে ভালো রেস্তোরাঁর জন্য সুনামগঞ্জ শহরে আসতে হবে। আর বর্ষায় নৌকা ভাড়া নিলে নৌকায় রান্নার ব্যবস্থা থাকে। সেক্ষেত্রে নৌকায় উঠার আগে বাজার করে নিতে হবে।
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি